প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃতি সন্তান | প্রকাশ: 5 Jun 2025, 9:00 PM
                                 
                        
                        নয়ন দেওয়ানজী
কুমিল্লার
প্রাচীন নিঃস্তব্ধ বাতাসে আজও ঘুরে বেড়ায় ইতিহাসের ক্ষীণ ধ্বনি, যা আমরা অনেকেই শুনতে পাই না,
তবু সে অনুপম অনুরণন ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের গভীর কোনে। কুমিল্লা
সেনানিবাসের সন্নিকটে ময়নামতির শান্ত সবুজ ভূমিতে অবস্থিত এক টুকরো ব্রিটিশ অতীত—ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের অগ্নিস্নানে যখন পৃথিবী বারুদের গন্ধে ভরে উঠেছিল, সেই সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার
যুদ্ধপ্রবাহে মৃত্যু হয়েছিল হাজারো কমনওয়েলথ সৈনিকের। তাঁদের অনেকেরই শেষ আশ্রয়
মিলেছে এই শান্ত সমাধিক্ষেত্রে। এখানে শুয়ে আছেন ৭৩৬ জন যোদ্ধা, যাদের মধ্যে অধিকাংশই কুমিল্লায় তৎকালীন সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ
করেছিলেন। সেই নীরব শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে মনে হয়—তাঁদের প্রাণপণ লড়াই আর নিঃশব্দ বিদায় শুধু ইতিহাসের
নয়, মানবতার এক
চিরন্তন অধ্যায়।
ময়নামতি
ওয়ার সিমেট্রি শুধু কবরের সারি নয়—এ এক নিঃশব্দ কাব্যগ্রন্থ। প্রতিটি ফলকে খোদাই করা নাম, পদবি, মৃত্যু
তারিখ আর ধর্মীয় প্রতীক যেন বলে যায় তাদের জীবনের অনুচ্চারিত গল্প। খ্রিস্টানদের
কবরের ক্রুশ, মুসলমানদের ‘হুয়াল
গাফুর’ খচিত ফলক—সব মিলিয়ে এ এক বহুধর্মীয়, বহুজাতীয় সম্মিলন, যেখানে
জাতি-ধর্ম-ভাষা পেরিয়ে সবাই শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন একটি সুমহান ত্যাগের ছায়াতলে।
এখানে
রয়েছেন যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন,
অবিভক্ত ভারতের ১৭৮, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আফ্রিকা, এমনকি জাপান ও পোল্যান্ডেরও
যোদ্ধারা। একত্রে এক সমাধিতে ঘুমিয়ে থাকা ২৩ জন বিমানসেনার স্মৃতিফলক যেন বলে—যুদ্ধ তাদের ছিন্ন করেছে, তবে মৃত্যু তাদের এক করেছে।
সমাধিক্ষেত্রের
প্রবেশমুখে যে তোরণ ঘর, তার দেয়ালে ইতিহাসের স্তবক খোদাই করা আছে—বাংলা ও ইংরেজিতে, যেন ভ্রমণকারী জানতে পারে এই মাটি কত প্রাণের মূল্য
চেনে। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় এক প্রশস্ত পথ, দুই
পাশে সারি সারি কবর ফলক, আর তাদের মাঝখানে ফুলগাছ—যেন প্রতিটি কবর প্রহরায় আছে একটি করে জীবনের প্রতীক।
প্রতি
নভেম্বরেই এখানে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃধর্ম প্রার্থনাসভা, যেখানে সকল ধর্মের প্রতিনিধি একত্রে
স্মরণ করেন এই সৈনিকদের, যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে
স্বাধীনতার মাটি। কেবলই ব্রিটিশ ইতিহাস নয়, আমাদের মাটির
বুকেও এই যোদ্ধাদের অবদান এক প্রকার ঐতিহ্য।
কখনো
ময়নামতিতে গেলে, শহরের কোলাহল থেকে দূরে এই নীরব সবুজ প্রাঙ্গণে দাঁড়ান। কবর ফলকের
দিকে তাকান, পড়ে ফেলুন একটি নাম, একটি তারিখ। হয়তো বুঝে যাবেন, এই মৃতরা এখনো
জীবন্ত আমাদের ভেতরে, আমাদের নীরবে শেখান কতটুকু মূল্য
দিতে হয় এক টুকরো শান্তির জন্য।
ময়নামতি
ওয়ার সিমেট্রি তাই শুধু এক সমাধিক্ষেত্র নয়—এ এক মৌন পাঠশালা, যেখানে প্রতিটি কবর একটি করে অধ্যায়, প্রতিটি
নাম একটি করে ইতিহাস।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
                                
                                কুমিল্লার মাঠে বিএনপির চূড়ান্ত দল সাজানো — যাদের ওপর ভরসা কর...
কুমিল্লার রাজনীতি আবার সরগরম। এক সময়ের রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই জেলা এখন জাতীয় রাজনীতির আলোচন...
                                
                                কোতোয়ালির সন্তান অবশেষে সদর আসনে— বিএনপির টিকিট পেলেন মনিরুল...
দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলার পর অবশেষে স্বপ্নের আসনে ফিরলেন কুমিল্লার কোতোয়ালির সন্তান মনিরুল হক চৌধুরী। কু...
                                
                                কুমিল্লায় অস্ত্র ও গাঁজাসহ বিপুল জব্দ: বিজিবির অভিযানে দুই ব...
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ধনপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, দুইটি...
                                
                                দক্ষতা বিকাশে বিদেশি ভাষা শেখার পরামর্শ দিলেন ড. সায়মা হক বি...
শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে হলে অন্তত একটি বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের আহ্বান জানি...
                                
                                নেপালে পানবাড়ি পর্বতে নিখোঁজ দুই ইতালীয় পর্বতারোহী, তীব্র তু...
নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের পানবাড়ি পর্বতে অভিযান চালানোর সময় দুই ইতালীয় পর্বতারোহী নিখোঁজ হয়েছেন। দেশটির...
                                
                                জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের জোর প্রস্তুতি: প্রশিক্ষণ ন...
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সরকার সর্বাত...
                                
                                রায়পুরে চেয়ারম্যান কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ও পুরষ্কার...
আখতার হোসাইন খানলক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিলক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল এ...
                                
                                ভয় নয়, বিস্ময়! কুমিল্লায় ধরা পড়ল ১২ ফুট লম্বা অজগর সাপ
কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় হঠাৎ করেই দেখা মিলল এক বিশাল আকৃতির অজগরের! শনিবার সকালে আনসার ক্যাম্পের পা...
                                
                                নির্বাচনের আগেই নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে: প্রাথমিক শিক্ষা...
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে থাকলেও নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দিতে কোন...
                                
                                কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব গঠনে তিন সদস্...
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (ছাত্রদল) নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংগঠন...
                                
                                রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে ২ শিশুসহ ৬ জনের...
ইউক্রেনে আবারও রাশিয়ার তীব্র হামলা। শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত চলা একের পর এক ড্রোন ও ক...
                                
                                সারাদেশে ক্যান্সার সচেতনতা বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
বাংলাদেশে ক্যান্সারসহ অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্...