প্রতিবেদক: Khazina akther | ক্যাটেগরি: শিল্প ও সাহিত্য | প্রকাশ: 30 Jun 2025, 12:07 PM
নিভে যাওয়া আকাশের নিচে চাঁদনীর গ্রাম ছিল যেন রূপকথার বাইরের এক নীরব ভূগোল—যেখানে নদী কথা বলে না, আর বাতাস হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে ফেলে।সে বড় হয়েছে নিঃশব্দে, এমন এক ঘরে—যেখানে মা নেই,আর বাবার ছায়া কেবল ফ্রেমের ভেতরেই থমকে গেছে।
তার জীবন ছিল গুছিয়ে রাখা চিঠির মতো—যা কখনো পড়া হয়নি, কখনো পাঠানো হয়নি,তবু প্রতিটি লাইনের ভেতর ঘুমিয়ে ছিল এক অমোঘ আর্তি !
এক বিকেলে গ্রামে এসে হাজির হয় এক অদ্ভুত বৃদ্ধ—চেহারায় যেন সময়ের গাঢ় রেখা,কিন্তু চোখে ছিল অদ্ভুত উজ্জ্বলতা।
তিনি চাঁদনীর স্কুলে বসে রোজ শিশুদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন,একদিন হঠাৎ বলে ফেললেন—“জানো মেয়েটি, তোমার চোখে যে ক্লান্তি—তা কেবল অভিজ্ঞ নয়, তা এক আলোকের পিপাসা।
চাঁদনী বিস্মিত। তিনি কে?
তার নাম ছিল 'অরণ্য দা'—একসময় শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।এক দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও সন্তান হারিয়ে সব ছেড়ে এই অজপাড়াগাঁয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব জন্ম নেয়—এক আলোর সন্ধানী মেয়ের সঙ্গে, এক ছায়ার মানুষ।
চাঁদনীর পাঠশালায় এক ছেলেকে নিয়মিত দেখা যেত না।তার নাম নীর।সে কথা বলত না, চোখ নামিয়ে রাখত সবসময়।
একদিন চাঁদনী তাকে খাতায় লিখতে দিল—
সে লিখল — “আমি কখনো নাম পাইনি।মা বলে— তোর কোনো গন্তব্য নেই।কিন্তু আপনি আমায় বসতে দিয়েছিলেন, এটাই প্রথমবার কাউকে ভালো লেগেছিল।”
চাঁদনীর বুক কেঁপে ওঠে।
সে জানে, সমাজের পেছনে পড়ে থাকা শিশুরা আসলে সবার আগে আলো চায়, শুদ্ধ দৃষ্টি চায়।সে নীরকে কোলে টেনে নেয় নিজের মতো।
গ্রামের পেছনে এক পরিত্যক্ত পুকুর ছিল—যেখানে সময় থেমে থাকে, আর জলের আয়নায় প্রতিফলিত হয় না কোনো মুখ।
চাঁদনী একদিন সেখানে নীর, অরণ্য দা ও কিছু শিশু নিয়ে গল্পের আসর বসায়।সেখানে তারা সবাই নিজের কথা বলে।
নীর বলে—“আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আমার জায়গা নেই—কিন্তু এই পুকুর জানায়, প্রতিটি ভাঙা ছবি জলে ভাসে,আর ভেসেই সে গল্প হয়ে ওঠে।”অরণ্য দা বলেন,—
“জীবন আমাদের কাঁদায়, কারণ সে চায় আমরা লিখি—যে কান্না ছুঁয়ে যায়, তা কখনো বৃথা যায় না।”
চাঁদনী সেদিন তার বাবার জন্য লেখা শেষ চিঠিটি পড়ে শোনায়—
সেখানে লেখা ছিল-“বাবা, তুমি যদি ফিরতে, বলতাম—তোমার না থাকার মাঝেও আমি মানুষ হতে পেরেছি।
তুমি গড়োনি আমাকে, আমিই নিজেকে গড়েছি।’”
সময় পেরোয়। চাঁদনী এখন পাঠশালার প্রধান।
নীর এখন বড় হয়ে শহরের শিক্ষক হতে চায়।
অরণ্য দা চলে গেছেন—শেষ চিঠিতে লিখে গেছেন কিছু কথা “তুমি আমার চোখে সেই মানুষ—যে অন্ধকারে বসেও আলো জন্মায়।এই পৃথিবী তোমার মতো মেয়েদের জন্যই আজও গীতময়।”
চাঁদনী সেই চিঠি রাখে বালিশের নিচে।আর রোজ বিকেলে সূর্য ডোবার আগে
সে পুকুরপাড়ে গিয়ে বলে—“বাবা, তুমি ফিরে না এলেও আমি ঠিক পথে এসেছি।
জীবন আমায় ভেঙেছে, তাই গড়েছে।”
আসলে জীবন একাকীত্বের দেয়াল নয়—জীবন অনুপম মূর্ছনার নাম,
যেখানে প্রতিটি ব্যথা, প্রতিটি ছায়া
নতুন একটি আলো জন্ম দিতে পারে।
—খাজিনা খাজি, কবিও লেখক।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘দেশের মানুষ ১৭ বছর...
মিল্লার লালমাই উপজেলার মনোহরপুর এলাকায় প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করে মাতলামি করার দায়ে দুই যুবককে কারাদণ্...
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে মো. মোস্তফা (৫০) নামের এক রাজমিস্ত্রির হাত-পা বাঁধ...
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়ে...
বরুড়া পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় প...
মুরাদনগরে ধর্ষকের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি সনাতনীদেরনিজস্ব প্রতিবেদক।। কুম...
The Weekly Swadesh Journal স্বদেশ জার্নাল