প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: কৃষি ও প্রকৃতি | প্রকাশ: 8 Jun 2025, 12:56 AM
প্রতি বছর দেশে আলুর বাম্পার ফলন হলেও হিমাগার সংকটে সেই ফসলের বড় একটি অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকের কষ্টার্জিত আলু যখন বাজারে মাত্র ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, তখন তা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয় নয়—এটি খাদ্য নিরাপত্তারও হুমকি।
দেশে বর্তমানে বছরে ১ থেকে ২ কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়। অথচ মাত্র ২২ লাখ টন আলু সংরক্ষণের মতো জায়গা রয়েছে ৩৩৭টি হিমাগারে। অর্থাৎ মাত্র ৫ ভাগ আলু সংরক্ষণের সুযোগ থাকছে, বাকিটুকু সময়ের আগেই বিক্রি করতে হচ্ছে বা পচে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আলু নষ্ট হয়ে যায়—যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা।
হিমাগারে প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের খরচ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হলেও, কৃষক নিজ বাড়িতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংরক্ষণ করলে খরচ পড়ে মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা। এই ব্যবধানই চাষিদের নতুন চিন্তার দিকে ধাবিত করছে—হিমাগার না পেলে নিজেই সংরক্ষণ করো।
আলু সংগ্রহের পর সরাসরি প্রখর সূর্যরশ্মি থেকে দূরে রাখতে হবে। সূর্য আলোতে আলুতে "ব্ল্যাক হার্ট" রোগ দেখা দিতে পারে। এরপর কাটা, পচা, থেঁতলানো বা রোগাক্রান্ত আলু বাদ দিয়ে ভালো আলু আলাদা করতে হবে। এরপর ছায়া-আলোযুক্ত জায়গায় শুকিয়ে ঠাণ্ডা ও বায়ু চলাচল করে এমন ঘরে গুদামজাত করতে হবে।
ঘরটি হতে হবে বাঁশ ও ছনের তৈরি, মাটি থেকে উঁচু, যেন আলুর শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় তৈরি হওয়া তাপ বাইরে বের হতে পারে। মেঝেতে বাঁশের চাটাই বা বালু বিছিয়ে আলু স্তুপ করে রাখতে হবে। স্তুপ যেন এক মিটার উচ্চতা ও দুই মিটারের বেশি প্রস্থ না হয়। আলু রাখা যাবে বাঁশের ঝুড়ি, ডোল বা মাটির পাত্রেও।
রোগ ও পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে নিম, নিশিন্দা, বিষকাটালির পাতা গুঁড়ো করে মিশিয়ে দেওয়া। গুদামে আলু রাখার সময় প্রতি ১৫ দিন পরপর পর্যবেক্ষণ জরুরি। পচা আলু সরিয়ে দিতে হবে, ইঁদুর বা পোকামাকড় দেখা দিলে তা দমন করতে হবে।
বীজ হিসেবে রাখা আলুতে অঙ্কুর গজানো শুরু হলে, সেগুলো আলাদা করে এমন স্থানে রাখতে হবে যেখানে হালকা আলো পড়ে এবং ভালোভাবে বায়ু চলাচল করে। অঙ্কুর গজানোর পর বেশি দিন রাখলে আলুর মান নষ্ট হয়, তাই দ্রুত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
এই ঘরোয়া সংরক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে শস্য বহুমুখীকরণ কর্মসূচি (সিডিপি)-এর আওতায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। যে কোনো পরামর্শের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস ও উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
প্রযুক্তির অভাব নয়, প্রয়োজন সচেতনতা ও প্রয়োগ। অল্প খরচে নিজ ঘরেই আলু সংরক্ষণ করে কৃষক নিজেই নিজের রক্ষাকর্তা হতে পারেন। হিমাগার না থাকাটাই যেন অজুহাত না হয়, বরং উৎসাহ হয়ে উঠুক নতুন পথ খোঁজার।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা এসেছে। ১ লাখ ৮২২টি এমপিওভু...
রয়েল এনফিল্ড–-শুধু একটা বাইক নয়, ইতিহাসের-ঐতিহ্যের অংশ! ১৮৯৩ সালে ইংল্যান্ডে যাত্রা...
বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া নতুন কোনো বিষয় নয়, তবে সাম্প্রতিক ত...
বৃষ্টি হচ্ছে…আর আমার হৃদয়ের সমস্ত নীল মেঘতোমার নামেই ছড়িয়ে দিচ্ছে জলরাশি,যেমন অকারণে, অথচ নির্ভেজাল...
বাবা দিবসে ফেসবুক ভরে যায় "আই লাভ ইউ বাবা" লিখায়, অথচ চল্লিশ -ষাট শতাংশ বাবাই আছেন...
কুমিল্লার ১৮টি থানার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নাজনীন...
The Weekly Swadesh Journal স্বদেশ জার্নাল