"পৃথিবীটাকে যেমন পেয়েছো, তার চেয়ে আরও সুন্দর করে রেখে যাও"—ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ও স্কাউটিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ব্যাডেন পাওয়েলের এই বাণী যেন প্রতিধ্বনিত হলো কুমিল্লার সবুজ পাহাড় ঘেরা লালমাইয়ে, যেখানে আয়োজন হয়েছিল কুমিল্লা মুক্ত স্কাউট গ্রুপের দুই দিনব্যাপী বার্ষিক গ্রুপ ক্যাম্প ২০২৫।
লালমাই আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৫ ও ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত এই অনন্য ক্যাম্পে শতাধিক রোভার ও গার্ল-ইন-রোভার সমবেত হয় এক মানবিক, দেশপ্রেমিক ও প্রকৃতি-ভিত্তিক নেতৃত্ব নির্মাণের মহৎ অভিযাত্রায়।
উদ্বোধনী দিনের সকালে স্কাউট পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ক্যাম্পের সূচনা করেন কুমিল্লা মুক্ত স্কাউট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন। জাতীয় গৌরবের অংশ হিসেবে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত হয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও আলোচনা সভা। প্রধান অতিথির আসনে ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক এএইচএম মহসিনুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা অঞ্চলের ডিআরসি আবু নোমান মো. সাইফুল ইসলাম এএলটি, শিক্ষক ও স্কাউট প্রশিক্ষক ডিআরসি মো. মনিরুজ্জামান এএলটি, উডব্যাজার ওমর সালেহ তাসরিফ ও তরুণ সরকার, এবং লালমাই মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সম্পাদক মো. নোমান।
পাহাড় ছুঁয়ে মানবিকতার দিগন্তে
দুপুরের পর গাইড রোভার মো. বাধনের নেতৃত্বে রোভার স্কাউটরা বেরিয়ে পড়ে ট্র্যাকিং অভিযানে। উপদল ভিত্তিক এই যাত্রা ছিল সমাজসেবার এক জীবন্ত পাঠ। ময়নামতি উপদল পাহাড়ের শিশুর মাঝে বিতরণ করে শতাধিক নতুন জামা-কাপড়। শালবন উপদল পৌঁছে দেয় সবজির বীজ, আর গোমতি উপদল বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলে দেয় ওষুধ।
সন্ধ্যায় ফিরে ক্যাম্প প্রাঙ্গণে আলোকিত হয় স্কাউটদের ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্প ফায়ার, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুখরিত হয় লালমাইয়ের প্রাকৃতিক প্রান্তর। সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চলের লিডার ট্রেইনার অধ্যাপক মো. আবু তাহের।
দ্বিতীয় দিনে প্রেরণার প্রজ্বালন
পরদিন সকালে পিটি ও প্রাতঃসভার পর আয়োজিত হয় পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন। বক্তব্য দেন সিনিয়র ও সাবেক রোভাররা—নাজমুল হাসান রনি, শাহরিয়ার রহমান ইমন, নূর মাহিন, খাদিজা ইয়াছমিন নেয়ামা, আনিছুর রহমান জয় এবং মো. বাধন।
শিক্ষা নয় শুধু, স্কাউটিং হলো জীবন গড়ার কারিগর
সমাপনী বক্তব্যে অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন বলেন,
“স্কাউটিং শুধু বিনোদন নয়, এটি এক প্রশিক্ষণমূলক আন্দোলন। এখানে একজন শিশুর কল্পনা, কিশোরের সাহস এবং তরুণের নেতৃত্ব এক সূতায় গাঁথা হয়। এই আন্দোলনের শক্তি লুকিয়ে আছে এর বহুমাত্রিক কর্মপ্রবাহে।”
আঞ্চলিক পরিচালক এএইচএম মহসিনুল ইসলাম বলেন,
“স্কাউটিং শুধু শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয় না, এটি তৈরি করে দায়িত্বশীল, আত্মনির্ভর ও মানবসেবায় প্রতিশ্রুতিশীল প্রজন্ম।”
সবুজে সবুজে আশার বীজ বুনে গেল যারা...
কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজ থেকে আগত শতাধিক স্কাউট সদস্য শুধু অংশগ্রহণ করলেন না—তারা প্রত্যেকে হয়ে উঠলেন সমাজ বদলের দূত।
লালমাই পাহাড়ের নীরব প্রহরীরাও হয়তো অনুভব করলো এক নতুন সূর্যের উত্থান, যারা ‘অধিক সুন্দর এক পৃথিবী’ রেখে যেতে চায়...