কুমিল্লা জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় গত জুলাই মাসের অপরাধ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
রবিবার (১০ আগস্ট) সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল কায়সার। উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ, সহকারী কমিশনার এবং জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় জানানো হয়, জুলাই মাসে কুমিল্লা জেলায় মোট ৪৭৫টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১১টি হত্যাকাণ্ড, ৩২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা এবং ৮টি ধর্ষণের মামলা। এছাড়াও ডাকাতি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, চুরি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণসহ দ্রুত বিচার আইনে মামলা সংখ্যার বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে ধর্ষণ, অস্ত্র উদ্ধার ও চোরাচালান সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
সড়ক দুর্ঘটনাও শঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। জুলাই মাসে ২৫ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, চলতি মাসে ২১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় এবং এসব মামলায় ৩৫৯টি রায় প্রদান করে মোট ২৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৪ জনকে অর্থদণ্ড, ৫ জনকে কারাদণ্ড ও ৭০ জনকে উভয় দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সভায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় যানজট নিরসন, মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা, শহরের জলাবদ্ধতা ও ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কার, পরিবেশ দূষণ রোধ এবং পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জেলা পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, কদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং যানজট নিরসনে নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অপরাধ দমনে পুলিশ-community পার্টনারশিপ জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল কায়সার সভায় অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত ও কার্যকর সমাধানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের প্রতি গুরুত্বের সাথে সমস্যা সমাধানে কাজ করার আহ্বান জানান, যাতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং কুমিল্লা জেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের সমন্বিত সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জনদুর্ভোগ ও নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কুমিল্লাবাসীর জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই জেলার কর্তৃপক্ষের প্রধান লক্ষ্য এবং এ লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বাহিনী। আগামীদিনে আরও শক্তিশালী ও দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে অপরাধ কমিয়ে আনা হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক।