
প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: শিল্প ও সাহিত্য | প্রকাশ: 11 Jun 2025, 11:47 PM


ছোট গল্প :
গ্রামের নাম দত্তপাড়া। ছোট্ট এক গ্রাম, কিন্তু নানা কাহিনিতে ভরপুর। এই গ্রামের সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র ছিল বলাই কাকা। কেউ তাকে কখনো এক রকম দেখেছে বলে দাবি করতে পারে না। একদিন তিনি ভিক্ষুক, পরদিন ব্রাহ্মণ, আরেকদিন হাটে দোকানদার! সবাই বলত, বলাই কাকা এক ‘বহুরূপী মানুষ’।
ছোটবেলায় আমি অনেকবার দেখেছি, স্কুল থেকে ফেরার পথে হঠাৎ দেখি তিনি এক কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে সন্ন্যাসীর বেশে পঞ্চবটীর নিচে ধ্যান করছেন। আবার ক’দিন পর দেখি, মাথায় গামছা বেঁধে খেতের মধ্যে লাঙল ঠেলছেন। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেন, “জীবন বড় বিচিত্ররে ভাই। রূপ পাল্টাইয়া বাঁচতে হয়!”
আমরা ছোটরা ভয় পেতাম। কেউ বলত, ও বুঝি ভূতের পাল্লায় পড়েছে, কেউ বলত, জাদুকর! কিন্তু সত্যিকারের গল্পটা আমরা জানতাম না।
একদিন পূজোর সময়, গ্রামে নাটক হবে—‘রক্তকরবী’। সবাই মিলে ঠিক করল বলাই কাকাকেই প্রধান চরিত্রে নেওয়া হবে। তিনি রাজি হলেন, তবে এক শর্তে—সবার সামনে রিহার্সাল করবেন না, সরাসরি মঞ্চে উঠবেন।
সন্ধ্যায় নাটক শুরু হতেই সবার চোখ কপালে! এক একজন ভাবছে, এই লোককে তো আলাদা চিনি! এ তো সেই মোড়ের দোকানদার, ও তো সেই দুধওয়ালা! নাটকের শেষে পর্দা নামল, হাততালিতে ফেটে পড়ল মেলা প্রাঙ্গণ।
সেই রাতে প্রথমবার বলাই কাকা আমাকে এক পাশে ডেকে নিলেন। বললেন, “তুই তো লেখাপড়া করিস, একদিন শহরে যাবি। শোন, মানুষ চেনা বড় কঠিন। রূপে নয়, কাজে মানুষ চিনিস। আমি এই গ্রামে নানা রূপে ঘুরি, কারণ আমি চাই মানুষ আপন রূপেই ধরা দিক। কখনো ভিক্ষুকের কাছে, কখনো সন্ন্যাসীর কাছে, মানুষ কেমন ব্যবহার করে—সব দেখি। এটাই আমার গবেষণারে পাগল।”
আমি হতবাক হয়ে শুনছিলাম। বলাই কাকা যেন কোনো নাটকের চরিত্র নন, বাস্তবের এক দার্শনিক।
এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। আমি এখন শহরের সাংবাদিক। মাঝে মাঝে দত্তপাড়ায় যাই। কিন্তু বলাই কাকাকে খুঁজে পাই না। কেউ বলে, তিনি হঠাৎ হারিয়ে গেছেন। কেউ বলে, তিনি এখন গিয়েছেন হিমালয়ে—সত্যিকারের সন্ন্যাস নিতে।
কিন্তু আমি জানি, তিনি হারাননি। তিনি আছেন, কোথাও না কোথাও, কোনো নতুন রূপে, হয়তো আবার খুঁজে বেড়াচ্ছেন মানুষের আসল মুখ।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

চাঁদপুরে এক বাগানে ৫৭ জাতের আম চাষ
অহনা খান, চাঁদপুর।।থোকায় থোকায় ঝুলছে ফ্রুট ব্যাগে ঝোলানো আম। কোথাও আবার দেখা মিলছে নানা আকারের রং-বে...

সরষপুর, নাদের পেটুয়ায় জাগো হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে ১০ম “শ্রীম...
ধর্মীয় উজ্জীবন ও সামাজিক ঐক্যের বার্তা নিয়ে জাগো হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে ১০ম বার্ষিক “শ্রীমদ্ভগ...

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ পর্বের ফল প্রকাশ, পাসের...
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।...

কাছারি বাড়িতে তালা, স্মৃতির দ্বারে এখন নীরবতা
রবীন্দ্রনাথ যেখানে বসতেন, সেই চৌকাঠ আজ স্তব্ধ। শাহজাদপুরের সেই ঐতিহাসিক কাছারি বাড়ি—যার প্রতি ইঁট, প...

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা...
মধ্যপ্রাচ্যে ফের চরম উত্তেজনা। ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শুক্র...

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চাতলপাড়ে নদীভাঙনের হুমকিতে শতাধিক পরিবার, স্...
বর্ষা এলেই আতঙ্ক নেমে আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চাতলপাড় ইউনিয়নে। মেঘনার ভাঙনে ২০১৮ সাল থেকে শতা...
