
প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 4 Jul 2025, 3:21 PM



কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে এক হৃদয়বিদারক গণপিটুনির ঘটনায় রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তার ছেলে রাসেল মিয়া (২৮) এবং মেয়ে জোনাকি আক্তার (২৩) নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে সংঘটিত এই বর্বর হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় অপর মেয়ে রুমা আক্তারকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত নিহত পরিবারটির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে ঘটনার পেছনে স্থানীয় বিরোধ, প্রভাব বিস্তার এবং এক কিশোরের মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়া সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের ট্রিগার হয়ে ওঠে।
মোবাইল চুরি ও উত্তেজনার সূচনা
গত মঙ্গলবার কড়ইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমীনের মোবাইল ফোন চুরি হয় বাজারের একটি ফটোকপি ও ওষুধের দোকান থেকে। সন্দেহভাজন হিসেবে ধরা পড়ে এক কিশোর, যিনি নিহত রুবির আত্মীয়। এরপর থেকেই রুবি পরিবারের সঙ্গে শিক্ষক রুহুল আমীন, স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া ও তাদের স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একাধিকবার দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, কিলঘুষির ঘটনা ঘটে।
বুধবার বিকেলে গ্রামবাসী মোড়ে জড়ো হয়ে রুবি পরিবারকে 'শাস্তি দেওয়ার' সিদ্ধান্ত নেয়। ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়াও উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এর পরের দিন সকালেই ঘটে গণপিটুনির এই মর্মান্তিক ঘটনা।
নির্মমতা ও নৃশংসতা
সাততলা ভবনের উঠানে রোকসানা আক্তারের মরদেহ, সিঁড়ির পাশে রাসেল মিয়া এবং সড়কের ওপর পড়ে ছিল জোনাকি আক্তার—প্রত্যেকেই নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, হামলার সময় রুবি চেয়ারম্যানকে থাপ্পড় মারলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। মুহূর্তেই জনতা হামলা চালায়।
মাদক-সংযুক্তি নাকি সামাজিক প্রতিহিংসা?
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত তিনজনসহ পরিবারটির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৩টি মামলা, যার অধিকাংশ মাদক সংক্রান্ত। তবে ঘটনার গভীরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকাবাসীর প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব এবং স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা এই ঘটনার মূলে ছিল।
পুলিশের নীরবতা ও দায়
ঘটনার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। আগের দিন বিকেল থেকে উত্তেজনা থাকলেও প্রশাসনের তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখা যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ যদি আগেভাগেই খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিত, তাহলে হয়তো এই প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হতো।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নজির আহম্মেদ খান জানিয়েছেন, “আইনি প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের গাফিলতি থাকলে তাও খতিয়ে দেখা হবে।”
মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ও আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এমএসএফ-এর সভাপতি সুলতানা কামাল এক বিবৃতিতে বলেন, “আইনের শাসনকে পাশ কাটিয়ে এমন নৃশংস গণপিটুনি সভ্য সমাজে অকল্পনীয়। এটি একটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন।” আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, “জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গণপিটুনিতে ৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিফলন।”
তদন্ত ও বিচার দাবি
অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

উল্টো রথে ঢাক-ঢোল, কাঁসা, শঙ্খ ও উলু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে...
তাপস চন্দ্র সরকার (কুমিল্লা)।। উল্টো রথযাত্রার মধ্যদিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্...

ক্যাম্পাস বার্তার উচ্চারণ-আবৃত্তি কর্মশালায় উচ্চারিত হলো শব্...
শব্দের শরীরে আলো জ্বলে উঠেছিল একদিন।"ক্যাম্পাস বার্তার উচ্চারণ-আবৃত্তি কর্মশালায় উচ্চারিত হলো শব্দের...

ফেনীতে ছেলেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় দেখে স্ট্রোকে পিতার মৃত্যু:...
ফেনীর মডেল থানা প্রাঙ্গণে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ছেলেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় দেখে...

মুরাদনগরে পরকীয়ার জেরে ভাসুরকে হত্যা: প্রেমিকের ঘরে মাটিচাপা...
কুমিল্লার মুরাদনগরে নিখোঁজের দুই দিন পর ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর প্রেমিকের ঘর থেকে মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার...

বরুড়ায় দিঘির পানিতে ডুবে দুই শিশু শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত...
কুমিল্লার বরুড়া পৌরসভার সাহারপদুয়া গ্রামে দিঘির পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু শিক্ষার্থীর করুণ ম...

কুমিল্লায় জমি বিরোধে প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা: সেপটিক ট্যাংকে...
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগ...
