প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: শিক্ষা ও সংস্কৃতি | প্রকাশ: 12 Jul 2025, 1:15 AM
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫শ ৯৩টি। এখানে পড়াশুনা করছে প্রায় ২ কোটি ১৮ লক্ষ শিশু। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে আছে এই বিদ্যালয়গুলো। লোকজনের দান করা ভূমিতেই গড়ে উঠেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের সন্তানদের কথা চিন্তা করে দেশের উন্নয়ন, শিক্ষা খাতের অগ্রগতির কথা ভেবেই এই জমিগুলো সরকারকে দিয়েছেন। স্বাধীনতার আগে এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তাদের এই মূল্যবান সম্পত্তি দান না করলে হয়তো এতগুলো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতো না।
প্রতিটি বিদ্যালয়েরই একটি নির্দিষ্ট ক্যাচমেন্ট এরিয়া রয়েছে। শিশু জরিপের মাধ্যমে ৪+ থেকে ১০+ শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়। ক্যাচমেন্ট এরিয়ার কোন শিশু যেনো ভর্তির আওতার বাহিরে না থাকে, কেউ যেনো ঝরে না পড়ে বছরের শুরুতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ জরিপ চালানো হয়। ফলশ্রুতিতে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি শিশু ভর্তি হওয়ার পর তার পড়াশুনার সকল দায়িত্ব সরকারের। বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে বই দেয়া থেকে শুরু করে শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান সবকিছুই সরকার করছে। তাহলে সরকারকে সহযোগিতা করতে তথা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন পেশার যারা বসবাস করছেন তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি? আমরা মনে করি তাদের অনেক বেশি দায়িত্ব রয়েছে। প্রতি বছর বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন ধরণের বরাদ্দ দিয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্লিপ (বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা),নীড বেস এসেসোরিস, রুটিন মেন্টিনেন্স, প্রাক প্রাথমিক, ক্ষুদ্র মেরামত, বৃহৎ মেরামত ইত্যাদি।
প্রতিটি বিদ্যালয়েই ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে। সাধারণত শিক্ষকগণ এ কমিটির সহযোগিতায় সমস্ত বরাদ্দের অর্থ খরচ করে থাকেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন শেখানো কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করার কথা বলা আছে। মা সমাবেশ,উঠান বৈঠক বিদ্যালয়ের সমস্যগুলো চিহ্নিত করে প্রাধিকারের ভিত্তিতে স্লীপের অর্থ খরচ করা হয়ে থাকে। এসব কাজে সহযোগিতার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামর্থ্যবানগণ ইচ্ছে করলেই এগিয়ে আসতে পারেন।
বিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে এবং সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় জনগোষ্টীর সম্পৃক্ততা অতিব জরুরি। সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ দিচ্ছে। তাহলে কি আমাদের দায়িত্ব একেবারেই শেষ? আমরা মনে করি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি। অনেক জায়গায় দেখা যায়, বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র নষ্ট করে ফেলছে, চুরি হয়ে যাচ্ছে। এসব করে আমরা কার ক্ষতি করছি? আমরা দেশেরই ক্ষতি করছি। এবং শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছি। শিক্ষকদের উচিত স্থানীয় জনসাধারণের সাথে সম্পর্কের উন্নতি করা। তাদেরকে বিদ্যালয়ে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা। মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক, স্লীপ, স্টেক হোল্ডার মিটিং, বৃক্ষরোপণ, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ যাবতীয় অনুষ্ঠানে পানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে সর্বসাধারনকে আমন্ত্রণ জানানো। এতে করে বিদ্যালয়ের প্রতি তাদের নতুন ধ্যান ধারনা পজিটিভ তৈরি হবে। এবং তাদের সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাতে উৎসাহী হবে। গত ১৩ নভেম্বর ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি পত্রের আলোকে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে এলামনাই এসোসিয়েশন গঠনের কথা বলা হয়। এটি একটি যুগান্তকারী এবং সমযোপযোগী পদক্ষেপ। আজ যারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘর, টিনের চালা কিংবা গাছতলা বসেই অনেকে প্রাথমিকের গন্ডি পার করেছেন। তার পরেও জীবনের প্রথম বিদ্যাপীঠের প্রতি রয়েছে উনাদের নিরন্তর ভালোবাসা। এখনও অনেকেই ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়ে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় একটু ঘুরতে যেতেই স্মৃতিকাতর হয়ে যান।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের থেকে নতুন ধ্যান-ধারণা নেয়া যেতে পারে। হয়তোবা তাদের একটু সু-দৃষ্টি বিদ্যালয়ের দৃশ্যপট পাল্টেই দিতে পারে। কোন অনুষ্ঠানে সাবেক জ্ঞানীদের উপস্থিতি কিংবা গুণীজনদের সংবর্ধনা অনেকেরই ধারণা পরিবর্তন করে দিতে পারে। তারা দেখে শিখবে, অমুকের সন্তান যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে বড় কিছু হয়। তাহলে আমার সন্তান পারবে না কেন ।। তাই আমাদের উচিত এই অংশীজন ও সাবেকদের কাজে লাগানো।
অংশীজনের সহায়তায় ঝরে পড়া রোধ, শতভাগ মিড ডে মিল বাস্তবায়ন, বাল্যবিবাহ বন্ধ, শিশু শ্রম রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বিদ্যালয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা, গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থাসহ যাবতীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে" আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়বো" এ শ্লোগান বাস্তবায়ন সম্ভব।
আলমগীর হোসেন।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
লালমাই, কুমিল্লা।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
চিত্তে হাদী ইসরাত মুনতাহা
তোমার মৃত্যুতে ওসমান হাদী,রোদনের ঝড় উঠেছে মাটি থেকে পাতাল অবধি। তুমি এক হাদী গিয়ে মরে,হাজার হাদ...
গ্রেপ্তারের আতঙ্কে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
ময়মনসিংহে গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় নিজ বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ম...
হামলা–ভাঙচুরের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের কণ্ঠ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ...
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ‘...
শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা ঘিরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অচল,...
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজাকে কেন্দ্র ক...
থানা হেফাজতে আটক নারীর রহস্যজনক মৃত্যু হোমনায় চাঞ্চল্য
কুমিল্লার হোমনা থানায় আটক থাকা হামিদা ওরফে ববিতা নামে এক নারী বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টা...
বরুড়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও প্রবাসী দিবস উদযাপন, রেমিট্যান্...
কুমিল্লার বরুড়ায় বৃহস্পতিবার(১৮ ডিসেম্বর) উপজেলা প্রশাসন ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অভিবাস...
বরুড়ায় জাকারিয়া তাহের সুমনের মনোনয়নে বিএনপির জোটবদ্ধ উপস্থিত...
কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন বরুড়া উপজেলা বিএনপির সভাপ...
শলুয়া বাজারে সাংবাদিককে গুলিতে হত্যা, আরেকজন আহত
খুলনায় এক সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি চালানোয় নিহত হয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন (৪৫)। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে...
ডলার শক্তিশালী হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে
মার্কিন ডলারের শক্ত অবস্থানের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে...
সারাদেশে বাদ জুমা দোয়া ও কফিন মিছিল, ওসমান বিন হাদীর মৃত্যুত...
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও...
হাদির মৃত্যুতে শাহবাগে বিক্ষোভে উত্তাল জনতা
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি মারা গেছেন। ব...
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধান...
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে আসছেন অন্তর্বর্তীকালী...